ভুরশুট
মধ্যযুগীয় বাংলার হিন্দু রাজ্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
ভূরিশ্রেষ্ঠ বা ভুরশুট ছিল অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাঢ় অঞ্চলের অন্তর্গত একটি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রাজ্য। মধ্যযুগে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর ভূরিশ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য বাঙ্গালা তথা পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় হিন্দু শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।[1]
রাঢ় অঞ্চলের দক্ষিণাঞ্চলে ভুরশুট রাজ্যটি স্থাপিত হয়েছিল। এই রাজ্যের অধিবাসীরা "ভুরিশ্রেষ্ঠী" নামে পরিচিত ছিল। এরা ছিল মূলত বণিক। এদের নামানুসারেই রাজ্যের নামকরণ হয় "ভুরশুট"। যদিও সম্ভবত ভুরশুটই ছিল রাঢ়ী ব্রাহ্মণদের মূল বসতাঞ্চল। পাল সাম্রাজ্যের উত্থানের সময় কোনো এক সুর রাজা এই রাজ্য শাসন করতেন। একাধিক সামন্ত রাজা এই রাজ্য শাসন করেছিলেন। ধীবর রাজবংশের (সম্ভবত ১৪শ-১৫শ শতাব্দী) লোককথায় এই রাজ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। এর পর কোনো এক ব্রাহ্মণ রাজবংশ এই রাজ্য শাসন করে।[2]
ভুরশুটের শেষ ধীবর রাজা শনিভাঙ্গর গড় ভবানীপুরের চতুরানন নিয়োগীকে পরাজিত করেছিলেন। চতুরাননের দৌহিত্র তথা ফুলিয়ার মুখটি রাজবংশের কৃষ্ণ রায় ভুরশুট দখল নিয়ে ভুরশুটের ব্রাহ্মণ রাজবংশের পত্তন ঘটান। মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে কৃষ্ণ রায় ১৫৮৩-৮৪ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। তার প্রপৌত্র প্রতাপনারায়ণ রায় (১৬৫২-১৬৮৪) ছিলেন ভুরশুটের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা। এই পরিবারে "রায়বাঘিনী" নামে এই বীরাঙ্গনা মহিলার কথা জানা যায়। তবে তার সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না।[2] সম্ভবত তার নাম ছিল ভবশঙ্করী। ভুরশুটের রাজা রুদ্রনারায়নের সাথে তার বিবাহ হয়।
আইন-ই-আকবরি থেকে জানা যায় সুলেমানাবাদ সরকারের অধীনস্থ ৩৩টি মহলের মধ্যে বসন্ধরী পরগনার পরেই ভুরশুট পরগনা থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হত। সপ্তগ্রাম সরকার বা মান্দারন সরকারের অন্য কোনো পরগনা এত রাজস্ব আদায় করত না। ১৮শ শতাব্দীতে বর্ধমানের রাজা কীর্তিচন্দ রায় ভুরশুট জয় করেন।[2]
ভুরশুট রাজ্যে তিনটি দুর্গ ছিল। এগুলি হল গড় ভবানীপুর, পান্ডুয়া (পেড়ো বা পেড়ো বসন্তপুর) ও রাজবলহাট। এই দুর্গগুলির এখন আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। তবে হাওড়া জেলায় রাজবলহাটের কাছে দামোদর নদের তীরে ডিহি ভুরশুট এবং তার পাশে পারভূরশুট নামে দুটি গ্রাম এখনও আছে।[2]
১৮শ শতাব্দীর বাঙালি কবি "রায়গুণাকর" ভারতচন্দ্র রায় পেড়ো ভুরশুটের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি সম্ভবত ভুরশুট রাজবংশের লোক ছিলেন।[2]