ব্রহ্মা
হিন্দুধর্ম অনুসারে সৃষ্টির দেবতা / From Wikipedia, the free encyclopedia
ব্রহ্মা (সংস্কৃত: ब्रह्मा) হলেন হিন্দুধর্মে সৃষ্টির দেবতা। পরব্রহ্মের ত্রিদেবতা বিষ্ণু ও শিবের সঙ্গে তিনি ত্রিমূর্তিতে বিরাজমান।[1][2][3] তিনি সৃষ্টি, জ্ঞান ও বেদ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।[4][5][6][7][8] তিনি অবশ্য হিন্দু বেদান্ত দর্শনের সর্বোচ্চ দিব্যসত্ত্বা ব্রহ্মের সমরূপ নন। বরং বৈদিক দেবতা প্রজাপতিকে ব্রহ্মার সমরূপ বলা চলে। [হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব,সৃষ্টিতত্ত্ব কিংবদন্তিতে] ব্রহ্মা স্পষ্টত উল্লেখিত হয়েছেন, যদিও সৃষ্টিতত্ত্বের বিভিন্ন সংস্করণ রয়েছে। কিছু পুরাণে বলা হয়েছে, তিনি স্বর্ণডিম্ব বা হিরণ্যগর্ভ হতে স্বয়ং উদ্ভূত হয়েছেন। তবে, ব্রহ্মা বৈদিক দেবতা প্রজাপতির অনুরূপ।[9] বৈষ্ণব সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে, বিষ্ণুর নাভিকমল থেকে ব্রহ্মা উত্থিত হয়েছেন। এজন্য ব্রহ্মার নাম কমলযোনি বা পদ্মযোনি। শৈবমতানুসারে বিশ্বাস করা হয়, শিব অথবা শিবদেহ থেকে ব্রহ্মার জন্ম, অন্যদিকে, দেবীতান্ত্রিক শাক্ত মতে উল্লেখ আছে, দেবীদুর্গা ব্রহ্মা সহ এই বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন।[10]
ব্রহ্মা | |
---|---|
ত্রিমূর্তি গোষ্ঠীর সদস্য | |
অন্যান্য নাম | স্বয়ম্ভু, বিরিঞ্চি, প্রজাপতি |
দেবনাগরী | ब्रह्मा |
অন্তর্ভুক্তি | ত্রিমূর্তি, দেব |
আবাস | সত্যলোক বা ব্রহ্মলোক |
মন্ত্র | ॐ वेदात्मनाय विद्महे हिरण्यगर्भाय धीमही तन्नो ब्रह्मा प्रचोदयात् ।। ওঁ বেদাত্মনায় বিদ্মহে হিরণ্যগর্ভায় ধীমহি তন্নো ব্রহ্মা প্রচেদয়াৎ।। |
অস্ত্র | ব্রহ্মাস্ত্র, ব্রহ্মশিরাস্ত্র ব্রহ্মাণ্ডাস্ত্র |
প্রতীক | শ্বেতপদ্ম, বেদ, জপমালা ও কমণ্ডলু |
বাহন | হংস |
উৎসব | কার্তিক পূর্ণিমা, শ্রীবেরী ব্রহ্মোৎসব |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
সঙ্গী | সরস্বতী (ব্রাহ্মণী) |
সন্তান | মানস পুত্রের অন্তর্ভুক্ত অঙ্গিরা, অত্রি, ভৃগু, চিত্রগুপ্ত, দক্ষ, হিমাবান, জাম্ববান, কাম, ক্রতু, কুমার, মরীচি, নারদ, পুলহ, পুলস্ত্য, শতরূপা, স্বয়ম্ভুব মনু এবং বশিষ্ঠ |
ব্রহ্মা সাধারণত চতুর্মুখ ও চতুর্বাহু বিশিষ্ট, শ্মশ্রুমণ্ডিত, রক্তাভ বা স্বর্ণাভ দেহধারী হিসেবে বর্ণিত হন। তার চার হাত চারবেদ এবং চার দিক—কে প্রকাশ করে। তিনি রক্তপদ্মে অবস্থান করেন এবং হংস (হাঁস,রাজহাঁস বা সারস তার বাহন। সাধারণত, দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী হিসেবে উল্লেখিত হন এবং ব্রহ্মার সৃজন শক্তি ও ব্রহ্মার জ্ঞান-এর নারীরূপ তিনি। শাস্ত্র অনুযায়ী, ব্রহ্মা তার সন্তানদেরকে মনের সংকল্প হতে সৃষ্টি করেছেন, তাই তাদেরকে ব্রহ্মার মানসপুত্র বলা হয়।[11] বর্তমান যুগে হিন্দুধর্মে, ব্রহ্মা তেমন জনপ্রিয় দেবতা নন এবং ত্রিমূর্তির অন্য দেবতা থেকে তার গুরুত্ব কম। প্রাচীন শাস্ত্রসমূহে ব্রহ্মার উল্লেখ থাকলেও তথাপি, ভারতবর্ষে ব্রহ্মা প্রধান দেবতা হিসেবে খুব কমই পূজিত হন।[12] ভারতে খুব কমই দেবতা ব্রহ্মার মন্দির রয়েছে, তবে রাজস্থান–এর পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দির খুব প্রসিদ্ধ।[13] ভারতের বাইরে ব্রহ্মাদেবের মন্দির রয়েছে, যেমন: থাইল্যান্ডের ব্যাংককের এরাবন তীর্থস্থান।[14]