পাকস্থলীর ক্যান্সার
From Wikipedia, the free encyclopedia
পাকস্থলীর ক্যান্সার (ইংরেজি: Stomach cancer) রোগটি গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার (Gastric cancer) নামেও পরিচিত, এটি সাধারণত পাকস্থলীরর আবরণী কলা থেকে উৎপত্তি লাভ করে।[1] প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো বুকজ্বালা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা, বমি ও ক্ষুধামন্দা পরবর্তী লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ওজন কমে যাওয়া, জন্ডিস, বমি ডিসফ্যাজিয়া বা খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া, পায়খানার সাথে কালো রক্ত যাওয়া(melena) ইত্যাদি। [2] ক্যান্সার পাকস্থলী থেকে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে বিশেষ করে যকৃৎ, ফুসফুস, অস্থি, পেরিটোনিয়াম বা উদর আবরণী ও লিম্ফনোড উল্লেখযোগ্য। [3]
হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাক্টেরিয়াম প্রায় ৬০% ক্ষেত্রে পাকস্থলীর ক্যান্সারের জন্য দায়ী। [4][5][6] এই ব্যাক্টেরিয়ামের কোনো কোনো বিশেষ টাইপের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও অনেক বেশি। অন্যান্য কারণের মধ্যে ধূমপান, জেনেটিক কারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ১০% ক্ষেত্রে পরিবারে ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস থাকে। পাকস্থলী ক্যান্সারের অধিকাংশই গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার। এটাকে আবার কয়েক উপশ্রেণীতে ভাগ করা যায়।লিম্ফোমা ও মেজেনকাইমাল টিউমারও পাকস্থলীতে হয়। পাকস্থলী ক্যান্সার সাধারণত কয়েকবছর ধরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপে এসে উন্নীত হয়।[5] এন্ডোসকপির মাধ্যমে বায়োপসি নিয়ে রোগ নির্ণয় করা হয়।তারপর মেডিকেল ইমেজিং এর মাধ্যমে শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়েছে কি না তা নির্ণয় করা হয়।[2] জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই দুই দেশে পাকস্থলী ক্যন্সারের রোগী সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সেখানে নিয়মিত ক্যান্সার স্ক্রিনিং পরীক্ষা করানো হয়।[5]
ধূমপান পরিহার ও ভূমধ্যসাগরীয় খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি এর চিকিৎসা করালে ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।[5][7] প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে অনেক ক্যান্সারই পুরাপুরি ভালো হয়ে যায়।[5] সাধারণত সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়।[2] বিলম্বে চিকিৎসা শুরু করলে পেলিয়েটিভ বা উপশমক চিকিৎসা নিতে পরামর্শ দেয়া হয়।[5] চিকিৎসার পর পাঁচ বছর বেঁচে হার মাত্র দশ শতাংশ কারণ অধিকাংশ রোগী একদম শেষ পর্যায়ে এসে চিকিৎসা আরম্ভ করেন।[8] যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ২৮%।[9]
ক্যান্সারের কারণ হিসেবে পাকস্থলী ক্যান্সার সারা পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে আছে এবং ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে আছে।[10] ২০১২ সালে প্রায় ৯,৫০,০০০ জন লোক এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৭,২৩,০০০ জন মৃত্যুবরণ করে।[10] ১৯৩০ সালের পূর্বে সারাবিশ্বের সব জায়গায় এটি ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল।[11][12][13] এরপর থেকে বিশ্বের অনেক স্থানে মৃত্যুহার অনেক হ্রাস পেয়েছে।[5] রেফ্রিজারেটর সহজলভ্য হওয়ায় আচার ও অধিক লবণাক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে এসেছে কারণ এখন ফ্রিজে খাবার অনেকদিন পর্যন্ত সতেজ রাখা যায়।[14] পাকস্থলী ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয় পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ অঞ্চলে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। [5]