জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম
From Wikipedia, the free encyclopedia
জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম (সংক্ষেপে এক্সপি) হলো এক ধরনের জিনগত ব্যাধি, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ (বিশেষ করে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত) পুনর্গঠনের ক্ষমতা হ্রাস পায়।[1] সামান্য সময় রোদে থাকার পরেও গুরুতর রোদে পোড়া, সূর্যের আলোয় আসা ত্বকে ছুলির মতো দাগ, ত্বকের শুষ্কতা এবং স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন এর অন্যতম প্রধান লক্ষণ।[1] বধিরতা, দেহসমন্বয়ে সমস্যা, বুদ্ধি হ্রাস, জ্ঞান হারানো প্রভৃতি স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।[1] ব্যাধির জটিলতায় ত্বকের ক্যান্সার ও ছানি পড়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকে। ব্যাধিতে আক্রান্তদের অর্ধেক দশ বছর বয়সের মধ্যে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।[1] এছাড়াও মস্তিষ্কের ক্যান্সার প্রভৃতি অন্যান্য ক্যান্সারেরও উচ্চ ঝুঁকি থাকে।[1]
জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম | |
---|---|
প্রতিশব্দ | ডিস্যাঙ্কটিস–ক্যাশিওনে ব্যাধি[1][2]
এক্সপি১ / এক্সপি২ / এক্সপি৩ / এক্সপি৪ / এক্সপি৫ / এক্সপি৬ / এক্সপি৭[3] জেরোডার্ম পিগমেন্টোসাম ১/২/৩/৪/৫/৬/৭[3] জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম পরিপূরক গ্রুপ এ/বি/সি/ডি/ই/এফ/জি[3] জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম গ্রুপ এ/বি/সি/ডি/ই/এফ/জি[3] |
জেরোডার্মা পিগমেন্টোসামে আক্রান্ত আট বছর বয়সী এক গুয়াতেমালান মেয়ে শিশু[4] | |
বিশেষত্ব | চিকিৎসা জিনতত্ত্ব |
লক্ষণ | সামান্য সময় রোদে থাকার পর ত্বকের গুরুতর রোদে পোড়া, সূর্যের আলোতে আসা অংশে ছুলির মতো দাগ, শুষ্ক ত্বক, ত্বকের স্বাভাবিক রঙে পরিবর্তন[1] |
জটিলতা | ত্বকের ক্যান্সার, মস্তিষ্কের ক্যান্সার, ছানি পড়া[1] |
রোগের সূত্রপাত | ছয় মাস বয়সের পূর্বেই দৃশ্যমান হয়[2] |
স্থিতিকাল | আজীবন |
কারণ | জিনগত ব্যাধি (অটোসোমের পশ্চাৎপসারণ)[1] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | লক্ষণ ও জিনতাত্ত্বিক পরীক্ষণ থেকে নিশ্চিতকৃত[5] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | ট্রাইকোথায়োডিসট্রফি, কোকেইন ব্যাধি, সেরিব্রোওকুলোফেসিওস্কেলিটাল ব্যাধি, এরিথ্রোপোয়েটিক প্রোটোপোরফাইরিয়া[6] |
প্রতিরোধ | অনিরাময়যোগ্য |
চিকিৎসা | সূর্য ও অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকা, রেটিনয়েড ক্রিম, ভিটামিন ডি[5][6] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | প্রত্যাশিত আয়ু প্রায় ৩০ বছরের মতো কমে যায়।[7] |
সংঘটনের হার | • ১,০০,০০০ জনে একজন (বৈশ্বিক)[3]
• ২২,০০০ জনে একজন (জাপান)[3] • ২,৫০,০০০ জনে একজন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)[10] • ৪,৩০,০০০ জনে একজন (ইউরোপ) • ১০,০০,০০০ জনে একজন (যুক্তরাজ্য)[3] |
জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম হলো অটোসোমের ওপর প্রভাব বিস্তারী। অন্তত নয়টি নির্দিষ্ট জিনে পরিব্যক্তির কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।[1][6] স্বাভাবিক অবস্থায় অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বকের কোষের ডিএনএর পরিবর্তন নিউক্লিওটাইড কর্তন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সংশোধিত হয়।[1] জেরোডার্মা পিগমেন্টোসামে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ এইভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরত যেতে পারে না।[1] ডিএনএর অস্বাভাবিকতা যত বাড়তে থাকে, ত্বকের কোষে তত বেশি পরিবর্তন ঘটে এবং কোষ মারা যেতে থাকে বা ক্যান্সারকোষে পরিণত হয়।[1] সাধারণত লক্ষণ অনুযায়ী বা জিনতাত্ত্বিক পরীক্ষণ থেকে এই ব্যাধি শনাক্ত করা হয়।[5]
জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম এক ধরনের অনিরাময়যোগ্য ব্যাধি। এখন পর্যন্ত এর নিরাময়ের কোনো উপায় আবিষ্কৃত হয়নি।[6] ব্যাধির চিকিৎসার জন্য সূর্যের আলো সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে হয়।[6] রোদে বের হওয়ার সময় অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিরোধী জামা, সানস্ক্রিন বা কালো রোদচশমা পরে প্রতিরোধের কাজ করা যায়।[6] রেটিনয়েড ক্রিম ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।[6] পরিপূরক হিসেবে সাধারণত ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন হয়।[5] যদি ত্বকে ক্যান্সার হয়, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চিকিৎসা করা হয়।[6] এই ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রত্যাশিত আয়ু স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ বছর কম হয়।[7]
সারা বিশ্বের প্রতি ১,০০,০০০ জনে প্রায় একজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হন।[3] অঞ্চলভেদে ভারতে প্রতি ৩৭০ জনে একজন,[8] জাপানে প্রতি ২০,০০০ জনে একজন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২,৫০,০০০ জনে একজন এবং ইউরোপে প্রতি ৪,৩০,০০০ জনে একজন এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।[10] পুরুষ ও নারীরা প্রায় সমানভাবেই আক্রান্ত হন।[11] ১৮৭০-এর দশকে মোর কাপোশি সর্বপ্রথম জেরোডার্মা পিগমেন্টোসামের অবস্থা বর্ণনা করেন।[5][11] ১৮৮২ সালে কাপোশি এই রোগদশায় শুষ্ক, রঙিন ত্বকের বৈশিষ্ট্যের জন্য জেরোডার্মা পিগমেন্টোসাম শব্দটির অবতারণা করেন।[11] এই রোগে আক্রান্তদের অনেক সময় “নিশীথ শিশু” বা “চাঁদের শিশু” নামে ডাকা হতো।[12][13]