মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চেঙ্গিজ খান (মঙ্গোলীয়: Чингис Хаан আ-ধ্ব-ব: [ʧiŋgɪs χaːŋ], ), (১১৬২[১]–আগস্ট ১৮, ১২২৭) প্রধান মঙ্গোল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা বা মহান খান, ইতিহাসেও তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। জন্মসূত্রে তার নাম ছিল তেমুজিন (মঙ্গোলীয়: Тэмүжин থেমুচিং)। তিনি মঙ্গোল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের (Екэ Монгол Улус; ১২০৬ - ১৩৬৮) গোড়াপত্তন করেন। নিকট ইতিহাসে এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। তিনি মঙ্গোলিয়ার বোরজিগিন বংশে জন্ম নিয়েছিলেন। এক সাধারণ গোত্রপতি থেকে নিজ নেতৃত্বগুণে বিশাল সেনাবাহিনী তৈরি করেন। যদিও বিশ্বের কিছু অঞ্চলে চেঙ্গিজ খান অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু বিজেতা হিসেবে চিহ্নিত[২] তথাপি মঙ্গোলিয়ায় তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে সম্মানিত ও সকলের ভালোবাসার পাত্র। তাকে মঙ্গোল জাতির পিতা বলা হয়ে থাকে। একজন খান হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে চেঙ্গিস পূর্ব ও মধ্য মঙ্গলিয়ার অনেকগুলো যাযাবর জাতিগোষ্ঠীকে একটি সাধারণ সামাজিক পরিচয়ের অধীনে একত্রিত করেন। এই সামাজিক পরিচয়টি ছিল মঙ্গোল।
চেঙ্গিজ খান | |||||
---|---|---|---|---|---|
মঙ্গোলদের সাম্রাজ্যের খাগান (মঙ্গোলদের খান) | |||||
![]() | |||||
রাজত্ব | ১২০৬ – ১২২৭ | ||||
রাজ্যাভিষেক | ১২০৬ (কুরুলতাই খেন্তি রাজ্য, মঙ্গোলিয়া এর সময়কালে) | ||||
উত্তরসূরি | ওগেদাই খান | ||||
সমাধি | বুরখান খাল্ডুন, খেন্টি প্রদেশ (বর্তমান মঙ্গোলিয়া) | ||||
বংশধর | জোচি চাগাতাই ওগেদাই তোলুই অন্যান্য | ||||
| |||||
প্রাসাদ | বোরজিগিন | ||||
পিতা | Yesükhei | ||||
মাতা | Ho'elun | ||||
ধর্ম | টেংরিজম |
চেঙ্গিস খান হল একটি সম্মানসূচক উপাধি যার অর্থ "সর্বজনীন শাসক" যা খানের প্রাক-বিদ্যমান উপাধির একটি বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে যা মঙ্গোলিয়ান ভাষায় একটি বংশ প্রধানকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। শব্দটিকে "চেঙ্গিস" শব্দটি তুর্কি শব্দ " তেঙ্গিজ " থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়, যার অর্থ সমুদ্র , সম্মানসূচক উপাধিটিকে আক্ষরিক অর্থে "সামুদ্রিক শাসক" করে তোলে, তবে তেমুজিনের শাসনের সর্বজনীনতা বা সামগ্রিকতার রূপক হিসাবে আরও বিস্তৃতভাবে বোঝা যায়। একটি মঙ্গোল দৃষ্টিকোণ।
১১৫০ থেকে ১১৬০ সনের মধ্যে কোন এক সময়ে চেঙ্গিজ খান জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল কাটান ঘোড়া চালনা শিখে। মাত্র ছয় বছর বয়সে নিজ গোত্রের সাথে শিকার অভিযানে যোগ দেয়ার অনুমতি পান। নয় বছর বয়সে তার বাবাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় এবং তাদের পুরো পরিবারকে ঘরছাড়া করা হয়। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষায় তিনি পরিবারের কর্তার ভূমিকা পালন শুরু করেন। অন্যকে রক্ষা করার বিদ্যা তখনই তার রপ্ত হয় যা পরবর্তীতে কাজে লেগেছিল।
৪০- ৫০ বছর বয়সের সময় তিনি মঙ্গোল জাতির পত্তন ঘটানোর পর বিশ্বজয়ে বের হন। প্রথমেই জিন রাজবংশকে পরাজিত করেন। চীন থেকেই তিনি যুদ্ধবিদ্যা কূটনীতির মৌলিক কিছু শিক্ষা লাভ করেন। পালাক্রমে দখল করেন পশ্চিম জিয়া, উত্তর চীনের জিন রাজবংশ, পারস্যের খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্য এবং ইউরেশিয়ার কিছু অংশ। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অধিকৃত স্থানগুলো হল আধুনিক: গণচীন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, কাজাখস্তান, কিরগিজিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং কুয়েত। চেঙ্গিজ খান ১২২৭ মারা যাওয়ার পর তার পুত্র ও পৌত্রগণ প্রায় ১৫০ বছর ধরে মঙ্গোল সম্রাজ্যে রাজত্ব করেছিল।
চেঙ্গিজ খান এশিয়া দখলের পর তুরস্ক বিজয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন তিনি প্রায় ২৫ লক্ষ নিরিহ মানুষ হত্যা করেছেন।
চেঙ্গিস খান শিকার করতে গিয়ে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়েছিলেন এবং ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন।[৩] তিনি ২৫ আগস্ট ১২২৭ তারিখে মারা যান, কিন্তু তার মৃত্যুকে গোপন রাখা হয়েছিল। [৪]খানের মৃত্যুর সঠিক প্রকৃতি নিয়ে তীব্র জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। রশিদ আল-দিন এবং ইউয়ান শাউ উল্লেখ করেন যে তিনি সম্ভবত ম্যালেরিয়া, টাইফাস বা বুবোনিক প্লেগে ভুগছিলেন। মার্কো পোলো এর মতে অবরোধের সময় তাকে একটি তীর দ্বারা বিদ্ধ করা হয়েছিল,কার্পিনির এর মতে চেঙ্গিসের ওপর বাজ পড়েছিল।
মৃত্যুর পর, চেঙ্গিসকে মঙ্গোলিয়ায় ফেরত নিয়ে যাওয়া হয় এবং খেন্টি পর্বতমালার বুরখান খালদুন চূড়া বা তার কাছে সমাধিস্থ করা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার নির্দিষ্ট বিবরণ জনসাধারণেরকাছে প্রকাশ করা হয়নি।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.