চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত
From Wikipedia, the free encyclopedia
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যা বাংলার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামেই সমধিক প্রচলিত। লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে বাংলার তৎকালীন জমিদারদের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল তার নাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। যা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে বঙ্গীয় তথা গ্রামীণ ভারতীয়দের মধ্যে। ১৭৯৩ সালে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির প্রথমাংশের বৃহত্তর আইনি নাম ছিল কর্নওয়ালিশ নীতি। এই চুক্তির ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মধারা তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়, অর্থ,আইন এবং বাণিজ্য। অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল প্রধানত জমিদারদের উপর। অবশ্য ইংরেজরা ভারতীয়দের জমির স্বত্ত্বভোগী হিসেবেই ব্যবহার করত। কিছু ভারতীয় জমিদার, যারা ইংরেজের বংশোদ্ভুত ছিল, তাদেরই সৌজন্যে ব্রিটিশ শাসক এই বিভাজন করতে পেরেছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথম বলবৎ হয়েছিল বাংলা এবং বিহারে।পরবর্তী সময়ে বারাণসী এবং মাদ্রাজের দক্ষিণদিকস্থ জেলাগুলিতে। পরবর্তী কালে এই প্রথা সমগ্র উত্তর ভারতে বিস্তৃত হয়েছিল ১লা মে,১৭৯৩ সালের এক অধ্যাদেশের বলে। এই আইন ১৮৩৩ সালের একটি সনদ বা ফরমান জারি হওয়া পর্যন্ত বলবৎ ছিল। অন্য যে দু'টি প্রথা ভারতবর্ষে বিস্তার লাভ করেছিল সে দু'টির নাম রায়তি প্রথা এবং মহল্লা প্রথা। অনেকে যুক্তি দেন যে, এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তর ফলশ্রুতিতে বহুবিধ ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল এর প্রাথমিক লক্ষ্য এবং কর আদায়ের ক্ষেত্রে। পশ্চিম ইউরোপের জমি-বাজারের আদলে জমি এবং চাষাবাদের ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগে জমিদারদের উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। এই কারণেই কোম্পানি এবং আঞ্চলিক অধিবাসীদের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি আর্থিক উন্নতির লক্ষে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল। কিন্তু মুশকিল হল কর আদায়ের জন্য প্রত্যাশিত নীতি নির্ধারিত যে অনুপাত ধার্য করা হয়েছিল তা অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানির কোষাগারে অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকবে। কারণ, অর্থ আদায় অপরিবর্তিত থাকলেও ব্যয় কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। ইতিমধ্যে বাংলার কৃষকদের অবস্থা উত্তরোত্তর করুণ হয়ে উঠবে। দুর্ভিক্ষ নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠবে। কারণ, জমিদাররা প্রত্যাশিত খাজনা না পেলে পূর্ব-নির্ধারিত কর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির কোষাগারে জমা দিতে পারবে না। এই ভয়ে কর প্রদানের নিশ্চয়তা প্রাপ্তির জন্য তারা স্থানীয় চাষিদের অর্থকরি ফসল,যেমন--তুলো,নীল এবং পাট ইত্যাদি চাষে বাধ্য করবে। কারণ, তারা বুঝতে পারবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কৃষি পরিকাঠামোতে বাস্তবায়িত করা সুদূর পরাহত বা অসম্ভবের নামান্তর।