উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা
প্রভাবিত বা জানানোর জন্য তৈরি উপাদান / From Wikipedia, the free encyclopedia
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা (ইংরেজি: PROPAGANDA) অথবা প্রোপাগান্ডা হলো এমন ধরনের পক্ষপাতমূলক ও ভ্রান্ত তথ্য যা একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা উদ্দেশ্যের প্রচারণায় ব্যবহৃত হয়।[1] উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা সাধারণত আংশিক সত্য বা আংশিক মিথ্যাকে বা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যকে প্রচার করে। জনগণের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গীর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয় এবং সব ধরনের প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। বক্তৃতা, প্রচারপত্র, পোস্টার, সংবাদপত্রে বিবৃতি, চলচ্চিত্র, ব্যক্তিগত ক্যানভাসিং, সংবাদ সম্মেলন, রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার, সেমিনার, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, অনলাইন রেডিও, ব্লগ, ক্ষুদে বার্তা ইত্যাদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা বিস্তারের অন্যতম মাধ্যম।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণাকে প্রায়ই কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, অবস্থান অথবা রাজনৈতিক লক্ষ্যের দিকে জনগণকে প্রভাবিত করার ও মনোভাব বদলে দেয়ার মনোবিজ্ঞানগত কৌশলের সাথে সংযুক্ত করা হয়, যার ফলে উক্ত উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যের প্রতি জনসমর্থন তৈরি হবে।[2] প্রোপাগান্ডা হচ্ছে এমন তথ্য যা বস্তুনিষ্ঠ হয় না এবং প্রাথমিকভাবে কোন শ্রোতাকে প্রভাবিত করতেই ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে প্রায়ই সত্যগুলোকে বাছাই করে প্রকাশ করা হয় (বর্জনের দ্বারা মিথ্যা) যাতে ব্যক্তি বিশেষ বিষয়ের উপর আগ্রহী হন, অথবা "লোডেড ল্যাঙ্গুয়েজের" মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করা হয় যেখানে প্রকাশিত তথ্যে যৌক্তিকতার বদলে আবেগের ব্যবহার করা হয়।[2] উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার সাথে প্রায়ই সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত উপাদানকে সম্পর্কিত করা হয়। কিন্তু কোন কোম্পানি বা কর্মী সংগঠনও (activist group) উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা প্রচার করতে পারে।
বিংশ শতকে, "প্রোপাগান্ডা" শব্দটিকে প্ররোচক অর্থে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে "প্রোপাগান্ডা" শব্দটি একটি নিরপেক্ষ শব্দ হিসেবে পরিচিত ছিল।[2][3] প্রোপাগান্ডা বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। মাধ্যমের ধরন নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভবের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে চিত্রকর্ম, কার্টুন, পোস্টার, পুস্তিকা, চলচ্চিত্র, রেডিও সম্প্রচার, টিভি সম্প্রচার ও ওয়েবসাইটকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
সাধারণ প্রচার-প্রচারণার সাথে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার মৌলিক পার্থক্য হল, এটি নিরপেক্ষ তথ্য প্রকাশ না করে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণকে একটি নির্বাচিত দিকে ধাবিত করতে সহায়তা করে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা এমন কিছু নির্বাচিত ঘটনা বা তথ্য তুলে ধরে যাতে কোন একটি বিষয় সম্পর্কে দর্শক কেবলমাত্র একটি উপসংহারে উপনীত হতে বাধ্য হয়। এসব তথ্য বা ঘটনা জনমনে আবেগের সঞ্চার করে এবং যুক্তিগ্রাহ্য চিন্তাভাবনা করতে বাধা দেয়। আধুনিক বিশ্বে রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আদর্শগত বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের একটি বড় হাতিয়ার এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। বিভিন্ন রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান অতীতে ও বর্তমানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণাকে জনগণের মন-মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এমনভাবে ব্যবহার করেছে (হলোকস্টকে বৈধতাদানের জন্য নাৎসিদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা) যে তা এখন একটি চরম নেতিবাচক বিষয় হিসেবে বিবেচিত। প্রকৃত অর্থে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্র ও সমাজের রীতিনীতি মেনে চলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা। একসময় স্বাস্থ্যসচেতনতা, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, অপরাধ সংঘটনের পর জনগণের করণীয় ইত্যাদি বিষয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা ব্যবহার করা হত।